Sunday, November 10, 2019

চুল কাটা নিয়ে পুলিশের কেন মাথা ব্যথা

চুল কাটা নিয়ে পুলিশের কেন মাথা ব্যথা






সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী, মাগুরা ও টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তরুণদের স্টাইলিশ চুল কাটার বিষয়ে যে কথিত নির্দেশ জারি করেছে তা তুলে নিতে বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর। 
সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, হেয়ার স্টাইলের উপর তরুণদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে না। তরুণ সমাজ বিপথগামী হলে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে আনতে পরিবার, শিক্ষক ও সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় তরুণদের চুল কাটার উপর স্থানীয় পুলিশের বিধিনিষেধ আরোপের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।
সর্বশেষ গত সোমবার রাজশাহীর বাঘায় ছাত্র, তরুণ ও যুবকদের ‘স্টাইলিশ’ চুল-দাড়ি না কাটতে সেলুন মালিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে পুলিশ প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন রেজার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বাঘা পৌর মেয়র আবদুর রাজ্জাক এবং বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম।
এর আগে গত ১১ আগস্ট ‘বখাটে’ স্টাইলে চুল না কাটার বিষয়ে সেলুন মালিক ও কর্মীদের ‘সচেতন’ করতে তথাকথিত প্রচারণা চালায় মাগুরা পুলিশ। দু’দিন ধরে এ বিষয়ে জেলা পুলিশের পক্ষে শহরে মাইকিং করা হয়। পুলিশ সুপার খান ‍মুহাম্মদ রেজোয়ানের পক্ষ থেকে মাগুরার সেলুন মালিকদেরকে জানানো হয়, কোনো সেলুনকর্মী যেন কারো চুল কিম্বা দাড়ি ‘বখাটে’ স্টাইলে না কাটেন।
এছাড়া চলতি বছরের ২০ মার্চ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মডেলদের অনুকরণে ‘স্টাইল’ করে চুল, দাড়ি ও গোঁফ কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম।
এসব এলাকার সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, প্রায় সময়ই ছাত্র ও যুবকদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছিলেন। এ কারণেই ওই বিধিনিষেধ। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সবাই সপ্তম থেকে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলেন: বিশেষ করে উঠতি বয়সের যুবকদের সংযত আচরণ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করার জন্যই চুল কাটার ‘স্টাইলের’ উপর বিধিনিষেধ। মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর ও উঠতি বয়সের যুবকদের হাতে খুনসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর পেছনে তাদের অস্বাভাবিক জীবন যাপন ও আচরণের যোগসূত্র পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন: নতুন প্রজন্মকে সচেতন করতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মানুষের লাইফস্টাইলের সাথে তার আচরণের নানা যোগসূত্র রয়েছে। কেউ যদি উদ্ভট পোশাক পরে, উদ্ভট স্টাইলে চুল কাটে যা দৃষ্টিকটু ও অস্বাভাবিক, সেটি তার জীবন যাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অধ্যাপক ফরিদা আক্তার খানম

‘স্টাইলিশ হেয়ার কাট’ একজন তরুণের জীবনে কতোটুকু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ফরিদা আক্তার খানম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: যুগের ডিমান্ডকে কখনোই অস্বীকার করা যাবে না। ইয়াং জেনারেশন আজকাল যা দেখে তাই ফলো করার চেষ্টা করে। তার ড্রেস কোড দেখেন, ফুড হ্যাবিট দেখেন– এসবও তার হেয়ার স্টাইলের মতোই একটা বিষয়। শুধুমাত্র তার হেয়ার স্টাইলই যে তাকে নেতিবাচক জীবন যাপনে নিয়ে যাবে তা কিন্তু নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর অপরাধের বিষয়গুলোর সঙ্গে স্টাইলিশ হেয়ার কাটের কোনো যোগসূত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন: এটা একটা উপাদানমাত্র। এটা বন্ধ করলেই যে কিশোর তরুণদের নেতিবাচক জীবনে অন্যকিছুর প্রভাব পড়বে না, তা নয়।
‘অভিভাবক, শিক্ষকরা সবাই মিলে যদি তরুণদের নেতিবাচক অন্যান্য বিষয়গুলো বন্ধ করতে পারে তাহলে ভালো ফলাফল আসতে পারে। আর যদি স্থানীয় প্রশাসন শুধু চুল কাটার জন্য কিশোর, তরুণদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে থাকে, তবে তা খুব ভালো ফলাফল আনবে না।

মো. সোহেল রানা

ড. ফরিদা খানম বলেন: স্থানীয় প্রশাসনকে মনে রাখতে হবে একটা আইন করে বা নিয়ম করে একটা জিনিসকে বন্ধ করলে যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে, সেটা নয়। সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অনেক কিছু করা সম্ভব।
‘হেয়ার স্টাইল’ বিষয়ে স্থানীয় কিছু পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারি মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া) মো. সোহেল রানা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: স্টাইলিশ চুল কাটার নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কোনো প্রকার নির্দেশনা ছিল না।
‘আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ওইসব এলাকার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি। যতো দ্রুত সম্ভব এ বিষয়টি আমরা বন্ধ করব।’