Monday, July 6, 2020

চির বিদায় নিলেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর



‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’—কিছু দিন আগে হুইলচেয়ারে চেপে মঞ্চে উঠে এই গানটি শুনিয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর। গাইবার সময় তিনি নিজে যেমন কেঁদেছিলেন, কাঁদিয়েছেন শ্রোতাদেরও। এর সবকিছু স্মৃতিতে মুড়ে ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে সোমবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা ৫৯ মিনিটের দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন রাজশাহীতে। স্ত্রী ইতি কিশোর ছাড়াও শিল্পীর ছেলে জে এন্ড্রু সপ্তক এবং মেয়ে মিনিম এন্ড্রু সংজ্ঞা থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। তারা দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। টিকিট মিললেই ফিরবেন বাংলাদেশে।
টানা ৯ মাস সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থেকে গত ১১ জুন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে দেশে ফিরেছিলেন এন্ড্রু কিশোর। তারপর থেকে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এই শিল্পী। শিল্পীর দুলাভাই ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি। যদিও সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার আগেই সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এক মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর বাঁচবেন এই শিল্পী। মূলত এমন তথ্য পেয়েই দেশে ফিরে এন্ড্রু কিশোর নিজ সিদ্ধান্তে নীরবে চলে যান জন্মশহর রাজশাহীতে।
যাওয়ার আগে স্বজনদের বলে যান, মায়ের পাশেই যেন সমাহিত করা হয়।
এর আগে অসুস্থ অবস্থায় গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছিলেন এই নন্দিত গায়ক। সেখানে গিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীনে ছিলেন তিনি। চলে টানা কয়েক মাসের কেমোথেরাপি।
এন্ড্রু ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে পরিচিত। তার চিরসবুজ কণ্ঠ অসংখ্য জনপ্রিয় রোমান্টিক গান উপহার দিয়েছে।


এন্ড্রু কিশোর: সিঙ্গাপুর থেকে নীরবে রাজশাহী ফেরার নীল বেদনা..."
এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে। সেখানে তিনি ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ’ গানে কণ্ঠ দেন। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গাওয়া গান প্রথম জনপ্রিয়তা লাভ করে।
প্লে-ব্যাকে তার গানের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। অন্যতম জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যেখানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায় প্রভৃতি।
দেশ-বিদেশের সুনামের পাশাপাশি তিনি সম্মানও পেয়েছেন অনেক। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: