সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসায় জেলায় বন্যার পানি কমছে, তবে হাওর এলাকায় বাড়ছে মানুষের র্দুভোগ। সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার উঁচু এলাকাগুলো থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনও শান্তিবাগ, মরাটিলা, নুতনপাড়া, নবীনগর, ষোলঘর, কালীপুর, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, হাছনবসত, সুলতানপুর মোহাম্মদপুর, বনানীপাড়া, কলেজ রোড, পশ্চিমহাজীপাড়া, বড়পাড়া, তেঘরিয়া, জেলরোড, লঞ্চঘাটসহ অনেক আবাসিক এলাকার সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। এসব এলাকার সড়কে নৌকা দিয়ে লোকজন শহরে আসা-যাওয়া করছেন। পৌর এলাকার ৬০ ভাগ ঘরবাড়ি ও আঙ্গিনায় এখনও বন্যার পানি রয়ে গেছে। নিচু এলাকার নলকূপগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট। সুনামগঞ্জ শহরের প্রতিটি সড়কে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ।
স্থানীয়রা জানান, ঢলের পানি ও প্রবল স্রোতে রাতে গ্রামীণ সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। হাওর বেষ্টিত সদর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ধর্মপাশা, শাল্লা, ছাতকসহ ৯টি উপজেলার কয়েক হাজার বসতবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। দুর্গত এলাকার লোকজন গবাদি পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। বসত বাড়ির আঙিনায় বন্যার পানি উঠে যাওয়ায় খড়ের খাদা পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে। এতে গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া গরুর ঘর পানিতে নিমজ্জিত থাকায় গবাদি পশুর বাসস্থানেরও সংকট দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা যায়, সদরের ৯টি, বিশ্বম্ভরপুরের পাঁচটি, তাহিরপুরের সাতটি, জামালগঞ্জের চারটি, ছাতকের পাঁচটি, শাল্লার একটি, দোয়ারাবাজারের দুটি, জগন্নাথপুরের তিনটি ও ধর্মপাশা উপজেলার চারটি ইউনিয়নসহ ৬১টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছেন। সদরের ১১টি, বিশ্বম্ভরপুরে আটটি, তাহিরপুরে ৩১টি, জামালগঞ্জে ২৫টি, ছাতকে তিনটি, দোয়ারাবাজারে তিনটি, শাল্লায় একটি, ধর্মপাশায় ২০টি ও জগন্নাথপুর উপজেলায় দুটি ও চারটি ছাতক, সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুরসহ চারটি পৌরসভায় ২৩টিসহ মোট ১২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এক হাজার ১৯৪টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। ৯টি উপজেলা ও চারটি পৌরসভায় ৬৬ হাজার ৮৬৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পানি কমে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৪১০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট, দিয়াশলাই, মোমবাতি, খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুবর রহমান বলেন, সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বর্ষণের কোনও সম্ভাবনা নেই। নদীর পানি দ্রুত কমে যাচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার ২৫ হাজার গবাদি পশু গোখাদ্য সংকটে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে ধর্মপাশা ও দোয়ারাবাজার উপজেলায়। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, বন্যার কারণে ৯টি উপজেলার তিন হাজার নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক এলাকায় নলকূপের ভেতরে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। সেগুলোকে জীবাণুমুক্তকরণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া প্লাবিত এলাকায় দুই লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।
সড়ক জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, বন্যায় জামালগঞ্জ- সুনামগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ দোয়ারাবাজারের সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়কে অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কগুলোর কোনও কোনও অংশ ভেঙে পড়েছে। এছাড়া জেলার ২৫ কিলোমিটার সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিভিল সার্জন মো. শামছ উদ্দিন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের জন্য মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া অব্যহত রয়েছে। ত্রাণের কোনও সংকট নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে।
শেয়ার করুন
0 coment rios: