Wednesday, September 27, 2017

পূজাকে কেন্দ্র করে পাট্টায় মজুদ ৩ হাজার লিটার : হাত বাড়ালেই মদ মিলে

নুর আলম: 
সরকারি লাইসেন্স নিয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই শহরে বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার লিটার মদ। অনেক অপ্রাপ্ত বয়স্কদের হাতেও তুলে দেওয়া হচ্ছে মদের বোতল। স্থানীয়দের তথ্যে প্রতি ঘণ্টায় বিক্রি হচ্ছে গড়ে ১৫০ বোতল চোলাই মদ। শহরের পশ্চিম বাজার এলাকার চন্দন সাহার পাট্টায় (মদের দোকান) এমন অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পাট্টার ম্যানেজার নিত্যগোপাল দাশের দেয়া তথ্যে, প্রতি মাসে কেবল শহরেই সাপ্লাই হচ্ছে ৩ হাজার লিটার মদ। স্থানীয়দের মতে এ পরিসংখ্যান আরো বেশি।
অভিযোগ রয়েছে, পাট্টা থেকে মদ বিক্রির জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট লোক। যারা বিভিন্ন পয়েন্টে থেকে মদ বিক্রিতে সহায়তা করেন। এমনকি অর্ডার অনুযায়ী হোম ডেলিভারিও দেয়া হচ্ছে তাদের মাধ্যমে।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে, সুনামগঞ্জ শহরে লাইসেন্সধারী মদের গ্রাহক আছেন মাত্র ৬৫১জন।
পাট্টার ম্যানেজার নিত্যগোপাল দাশের তথ্যে, প্রতি মাসে গড়ে তিন হাজার লিটার মদ বিক্রি করছেন তারা। প্রতি চালানে ২ হাজার লিটার করে আনা হয়। ড্রাম সহকারে আনার পর দোকানে এনে পানি মিশিয়ে বোতলজাত করা হয়। এর আগে কেরো এন্ড কোম্পানির নামে প্রতি চালানে ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। শ্রীমঙ্গলের পণ্যাগার থেকে চালান আনতে প্রতি চালানে ১ লক্ষ ২৩ হাজার ২শ টাকা জমা দেওয়া হয় বলে জানান নিত্যগোপাল।
জানা যায়, প্রতি মাসে শহরের পাড়া মহল্লায় গড়ে তিন হাজার লিটার মদ বিক্রি হয়ে থাকে। এসব মদ সাপ্লাই হচ্ছে ৫০০ এমএল ও ২৫০ এমএল বোতলে করে। প্রতি ৫০০ এমএল বোতল বিক্রি হয় ২২০ টাকায়। ২৫০ এমএল বোতল বিক্রি হয় ১১০ টাকায়। অভিযোগ রয়েছে, গ্রাহক ধরে রাখতে বাকিতেও বিক্রি করা হয় মদ।
সংশ্লিষ্ট ম্যানেজার জানিয়েছেন, আসন্ন দুর্গা পূজাতে প্রায় ৪ হাজার লিটার মদ বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় মধ্য বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, মদের পাট্টায় বিভিন্ন দিন হাজারেরও অধিক বোতল মদ বিক্রি হয়। অনেক অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরাও মদের বোতল নিয়ে পাট্টা থেকে বেরিয়ে আসে। লাইসেন্সধারী এই মাদক ব্যবসায়ীকে নিয়ম মেনে মদ বিক্রির সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তিনি নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। তাছাড়া যাদের মদের লাইসেন্স আছে শুধু তাদের মধ্যেই নয় লাইসেন্স ছাড়াই মদ বিক্রি করা হচ্ছে অবাধে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে জেলায় কেবল মদ উদ্ধার ও এ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা কয়েক শতাধিক। যেগুলোর প্রত্যেকটিতেই অপরাধীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এর মধ্যে কেবল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেই দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা ৩৮৫টি। আর বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা হয়েছে আরো ১০৮টি মামলা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরো ৩৮৫টি মামলা দায়ের করা হয়। পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের হয় আরো ৭৮টি মামলা। যেগুলোর প্রায় প্রত্যেকটিতেই বিপুল পরিমাণে মদ উদ্ধারসহ সাপ্লাইয়ার ও সেবনকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার রেকর্ড অনুযায়ী, চলতি বছরই এ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হয়েছে ৮১টি মামলা। বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরো ২২টি মামলা রয়েছে। সদর মডেল থানায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মদ উদ্ধারসহ বহনকারী এবং সেবনকারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের হয় ৩৫টি মামলা। পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরো ৫৪টি মামলা দায়ের করা হয়। তবে পাট্টায় অবাধে লাইসেন্সধারী ছাড়া মদ বিক্রি হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
পাট্টার ম্যানেজার নিত্যগোপাল দাস বলেন, সত্বাধিকারী চন্দন সাহা ও সুমন সাহার এ ব্যবসা নতুন না। তাদের দাদা-বাবাও এ ব্যবসায় ছিলেন। আরকিছু জানতে চাইলে চন্দন সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তবে এ ব্যাপারে চন্দন সাহা’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
শহরের বাসিন্দা মুফতি মাওলানা বদরুল আলম বলেন, ‘ইসলামে মদ পানকে স্পষ্টভাবে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এখন যা দেখছি শহরের যুব সমাজকে ও তাদের চরিত্রকে ধংস করে দেয়ার জন্যই হাতে হাতে সহজলভ্যভাবে মদ তোলে দেয়া হচ্ছে। হাত বাড়ালেই মদ পাওয়া যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় যুবক ও তরুণদের হাতে মদ পৌঁছে যাওয়াটা আমরা কখনোই ভালো দিক বলতে পারি না। এ ব্যাপারে একবার আমরা শহরে এভাবে মদ বিক্রির বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলাম। আমরা চাই এ বিষয়টা প্রশাসনিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হোক।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘তাদেরকে সরকারি লাইসেন্স দেয়ার মানে এই নয় যে তারা পারমিট ছাড়া মদ কারো কাছে বিক্রি করতে পারেন। যিনি ক্রয় করবেন তার যদি খাওয়ার লাইসেন্স থাকে তাহলে তারও খাওয়ার লিমিট রয়েছে। অতিরিক্ত ও যে কারো কাছে বিক্রির বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো। আমরা আমাদের নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি করছি’।
পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা আমাদের পর্যায় থেকে মাদক প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছি। আমরা একচুল পরিমাণও ছাড় দিতে রাজি নই। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চন্দন সাহা ও সুমন সাহার সঙ্গে তার আরো এক ভাই প্রবাসে থেকেও মাদক ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। যেহেতু তার কাছে একটা লাইসেন্স আছে সে কারণে বিষয়টি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: