রোহান, জামালগঞ্জ:
সরকারি খরচে বাড়ির সামনে গেছে বিদ্যুতের খোঁটা, কিন্তু জামানতের মাত্র ৬৫০ টাকার ব্যবস্থা করতে না পারায় সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওরপাড়ের প্রান্তিক কৃষকদের অনেক পরিবারই বিদ্যুৎ নিতে পারছেন না। বিগত ফসল মৌসুমে হাওরডুবে সর্বশান্ত মানুষগুলোর কাছে বাড়ির সামনের বিদ্যুতের খোঁটাগুলোও এখন আনন্দের বদলে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাগনার হাওরপাড়ের ফেনারবাঁক ইউনিয়নের উজান লালপুর গ্রামের নাজমা আক্তার বললেন,‘পেটে ভাত নাই, ঘরে একবেলা খাওনের চাল নেই। প্রতিবেশির কাছেও সাহায্যের জন্য হাত বাড়ানোর উপায় নেই। সকলেরই এক অবস্থা। এই অবস্থায় বিদ্যুতের খোঁটা দেখা ছাড়া করার কিছু নেই, এটি আমাদের জন্য আরেক কষ্ট, সরকার আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন করেছেন, কিন্তু আমরা সামান্য টাকারও ব্যবস্থা করতে পারছি না।’
কেবল নাজমা আক্তার নয়, উজান লালপুর ও শরিফপুরের প্রায় ৩৬৬ পরিবারই এমন কষ্ট সহ্য করছেন। তাঁদের বাড়ির উঠোনে বিদ্যুতের খোঁটা কিন্তু ঘরে বিদ্যুৎ নেই।
উজান লালপুর গ্রামের সাজেদা বেগম, আফরোজা বেগম, সুরেশা বেগম, কুলফিয়া বেগম, ফুলেমা বেগম জানালেন গ্রামের ২৬০টি পরিবারের তারা ৬০-৭০ টি পরিবার রয়েছেন, যাদের এবার একবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা হলে, আরেক বেলা নিয়ে চিন্তায়
থাকতে হয়। এই অবস্থায় ৬৫০ টাকার ব্যবস্থা হচ্ছে না তাঁদের। যারা গরু বিক্রি বা জমি বন্ধক রেখে টাকা এনেছেন, তাদের কেউ কেউ বিদ্যুৎ ঘরে নিয়েছেন। ১০০ পরিবার এখনও বিদ্যুৎ নিতে পারেনি।
শরীফপুর গ্রামেরও একই অবস্থা। গ্রামের মোট পরিবারের সংখ্যা ৩৩৬ টি এরমধ্যে ১৭০ টি পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন। বাকী ১৬৬ টি পরিবার এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারছেন না।
গ্রামের ফরিদ মিয়া ভিক্ষা বৃত্তি করে সংসার চালান, কিতাব আলীর একই অবস্থা। কিন্তু বাড়ির সামনে বিদ্যুতের খোঁটা দেখে তাঁরা খুশি। বললেন,‘৬৫০ টাকারও ব্যবস্থা হবে না, বিদ্যুৎ নিতেও পারবো না।’
ফেনারবাঁক ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন,‘আমার ওয়ার্ডে অনেক পরিবার আছেন হতদরিদ্র,তারা জামানতসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে না পারায় বিদ্যুৎতের সংযোগ নিতে পারছেন না।’
উজান লালপুর গ্রামের ইউপি সদস্য শুক্কুর আলী বলেন,‘আমার গ্রামে ২৬০টি পরিবারের মধ্যে ২০০ পরিবার এখনো টাকা জমা দিতে পারেননি।’
সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎতের জেনারেল ম্যানেজার সোহেল পারভেজ বলেন, ‘প্রতিটি গ্রাহককেই ৬৫০ টাকা করে জমা দিতে হয়, এই টাকাটা গ্রাহকের হিসাবেই থাকবে, যখন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চাইবেন, তখনই টাকা ফেরৎ পাবেন গ্রাহক।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন,‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। এখন যারা একেবারেই হতদরিদ্র তাদের বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখবো।’
0 coment rios: