Sunday, November 5, 2017

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে পাঠদান ব্যাহত



বিশেষ প্রতিনিধি-মনির আমান:
অবকাঠামোগত সংকট, শিক্ষক শূন্যতা এবং কোন কোন শিক্ষকের অদায়িত্বশীলতার কারণে সুনামগঞ্জের উচ্চ শিক্ষার প্রধানতম বিদ্যাপীঠে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। একাদশ থেকে মাস্টার্স শ্রেণির পাঠদানের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার ৮০০। অধ্যক্ষ থেকে সহকারী গ্রন্থাগারিক পর্যন্ত ৬১ টি পদ থাকলেও আছেন ৩৮ জন। এরমধ্যে ৮ জনেরও অধিক শিক্ষক রয়েছেন যারা শতকরা কমপক্ষে ২৫ ভাগ ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেন।
১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে ১০ বছর আগে অনার্স চালু হয়। বর্তমানে ১০ টি বিষয়ে অনার্স এবং ৪ টি বিষয়ে মাস্টার্স চালু রয়েছে। কলেজে শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন ২৬ টি। শ্রেণিকক্ষ আছে ১৪ টি। এই অবস্থায় এক শ্রেণির ৪ টি’র বেশি ক্লাস হয় না শিক্ষার্থীদের। কলেজে একদিকে শিক্ষক সংকট, অন্যদিকে গড়ে ৮ জনেরও বেশি শিক্ষক প্রায়ই পাঠদানে অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে।
কলেজের ¯œাতক ২য় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বললো, ‘কলেজ অধ্যক্ষই অনিয়মিত, এ কারণে অন্য শিক্ষকরা সুযোগ নেন।’ এমন মন্তব্য একাধিক শিক্ষার্থীর।
কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ভুবনজয় আচার্য্য ২৩ অক্টোবর কলেজে যোগদান করে যাওয়ার পর শনিবারই প্রথম কলেজে এসেছেন। ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. নূর-এ আলমকে ক্লাসে দেখা যায় কালে-ভদ্রে। এই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলামেরও একই অবস্থা। দর্শন বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু তালেব, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রশীদ খান, একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শফিকুর রহমান, উদ্ভিদ বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক গোলাম আহমদ খান, প্রভাষক সুবীর পাল, প্রাণী বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক জেসমিন চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীরের ক্ষেত্রে একই ধরনের অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।       
অভিযোগের বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. নূর-এ-আলম বললেন,‘আমি ক্লাসে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি সত্য নয়।’ এই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন,‘আমি ক্লাসে অনুপস্থিত থাকি না। আমার বাড়ি রাজশাহীতে, বাড়ি গেলে যাওয়া-আসায় পথে চার দিন লাগে।’ দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন,‘আমার চেয়ে বেশি ক্লাস কেউ নেয় না।’ গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রশীদ খানও পাঠদানে অনুপস্থিত নেই দাবি করে বলেন,‘বাড়ি যাওয়া-আসায় তাঁর কিছুটা সমস্যা হয়।’ এই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শফিকুর রহমান বলেন,‘আমি নিয়মিত ক্লাস নেই। ডিপার্টমেন্ট প্রধান কম আসেন।’ উদ্ভিদ বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক গোলাম আহমদ খান দাবি করলেন, মাস খানেক হয় যোগদান করেছেন। ক্লাস ফাঁকি দিতে অভ্যস্ত নন তিনি। এই বিভাগের প্রভাষক সুবীর পাল দাবি করলেন, তিনি নিয়মিত থাকেন। বিভাগীয় প্রধান সপ্তাহে ৩-৪ দিন থাকেন। প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেসমিন চৌধুরী নতুন এসেছেন জানিয়ে বললেন,‘ক্লাস কম হয় না। আমি নতুন এসেছি, আগে ডিপার্টমেন্টে একজন ছিলেন।’ এই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর বললেন,‘ছুটিতে গেলে কেউ না কেউ ক্লাস নেন। থাকলে ক্লাস ঠিকই হয়।’
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুস ছত্তার বলেন,‘সীমাহীন সংকট বিরাজ করছে কলেজে। অবকাঠামো সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন ২৬ টি, আছে ১৪ টি। এ কারণে ক্লাস করা যাচ্ছে না। এমনিতেই শিক্ষক সংকট। এরমধ্যেই পদার্থ, রসায়ন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও দর্শনের ৪ শিক্ষককে শহরের মহিলা কলেজেও ক্লাস নেবার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি আরও সমস্যা বাড়িয়েছে। ৮ জন খ-কালীন শিক্ষক নিয়ে কোনভাবে পাঠদান অব্যাহত রাখা হচ্ছে। ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ২৩ তারিখ যোগদান করেছিলেন, তিনি আজ (শনিবার) প্রথম এসেছেন। নূর-এ আলম শনিবার আসেন না। কামরুল ইসলাম বাড়িতে গেলে কয়েকদিন থেকে আসেন। আবু তাহের বাড়ি নির্মাণের জন্য দেড় মাস অনিয়মিত ছিলেন। আব্দুর রশীদের বাড়ি কুমিল্লায়, তিনি অনিয়মিত। শফিকুর রহমানও অনিয়মিত। গোলাম আহমদ খান সিলেট থেকে একদিন পরে পরে আসেন। সুবীর পাল টানা থাকেন না। জেসমিন চৌধুরী হবিগঞ্জ থেকে যাওয়া-আসার মধ্যেই পাঠদান করেন। এই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হুমায়ুন কবীরও নিয়মিত নয়।’
নিজের অনুপস্থিত প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ আব্দুছ ছত্তার বলেন,‘আমি অফিসের উপরেই থাকি। আমি অফিসিয়েল এবং ব্যক্তিগত খুব জরুরি কাজ ছাড়া অনুপস্থিত থেকেছি এটি ছাত্র-শিক্ষক কেউই বোধ হয় বলবেন না।’

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: