Wednesday, October 18, 2017

এবার সুনামগঞ্জের জন্য শুধুমাত্র ব্রি-ধান ২৮ জাতের বীজ বরাদ্দ



অসীম: 

সুনামগঞ্জের হাওরে আগামী বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য (বিক্রির লক্ষ্যে) কৃষি মন্ত্রণালয় এবার শুধুমাত্র ব্রি-ধান ২৮ জাতের বীজ বরাদ্দ করেছে। সিলেট অঞ্চলের জন্য ৪ হাজার ২০০ মে. টন ব্রি-ধান ২৮ জাতের বরাদ্দের প্রায় পুরোটাই সুনামগঞ্জের জন্য দেয়া হয়েছে। এই ধানের ফলন ২৯ জাতীয় ধানের চাইতে কিছুটা কম হলেও কম সময়ে পাকে।
সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার জন্য মাত্র ১৮৫ মে.টন ব্রি-ধান ২৮ জাতের বীজ সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। এদিকে বীজ ধানের দামও গত বছর থেকে প্রতি ব্যাগে ১৫০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। 
গত বছর ১০ কেজি বীজ ধান কৃষকদের কাছে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হলেও এবছর ১০ কেজি বীজ ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা করে ৫০০ টাকা। তবে বীজ ডিলারগণ ১০ কেজির বীজ ধান ৪৩ টাকা কেজি দরে ৪৩০ টাকা করে ক্রয় করবেন। 
প্রথমে সুনামগঞ্জের জন্য ব্রি-ধান ২৮ জাতের পাশাপাশি ব্রি-ধান ২৯ জাতের বীজ সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত হলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা ও দ্রুত হাওর থেকে ধান কেটে তোলার লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও কৃষি সম্প্রসারণ       অধিদপ্তরের উপ পরিচালক। 
তবে কৃষকদের দাবি ব্রি-ধান ২৮ জাতের পাশাপাশি ব্রি-ধান ২৯ জাতের বীজ সরবরাহ করতে হবে। না হলে কৃষকরা শুধুমাত্র একজাত ধান চাষ করবেন না। কারণ ব্রি-ধান ২৮ জাতের ফলন ব্রি-ধান ২৯ জাত থেকে অনেক কম হয়। ব্রি-ধান ২৮ জাত চাষাবাদে কৃষকদের আগ্রহ অনেক কম। বিএডিসি থেকে ওই ধানের বীজ ডিলারদের কাছে সরবরাহ করা হলেও বাজারে বিক্রি হবে না। কৃষকরা যে যেভাবে পারেন উচ্চ মূল্যে ক্রয় করবেন। মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। 
সুনামগঞ্জ বিএডিসি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখে সুনামগঞ্জ বিএডিসি অফিসকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল সুনামগঞ্জ জেলার জন্য ব্রি-ধান ২৮ জাতের পাশাপাশি ২৫২০ মে. টন ব্রি-ধান ২৯ জাতের বীজ সরবরাহ করা হবে। কিন্তু মাত্র ৪ দিন পর চলতি মাসের ২ তারিখে কৃষি মন্ত্রণালয় সুনামগঞ্জের হাওরের জন্য সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শুধুমাত্র ৪ হাজার ১৫ মে. টন ব্রি-ধান ২৮ জাতের বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামী রবিবার থেকে বিএডিসি থেকে ডিলারদের কাছে এসব বীজধান বিক্রয় করা হবে। 
এদিকে হাওরের বোরো ফসলহানির কারণে সুনামগঞ্জের ৩ লাখ কৃষককে ভর্তুকি হিসাবে ৫ কেজি করে আরো ১৫০০ মে.টন ব্রি-ধান ২৮ জাতের বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে। তাই এবছর ব্রি-ধান ২৮ জাতের বীজ ধানের চাহিদা অনেক কম বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। 
ধর্মপাশার সানবাড়ি গ্রামের স্বাবলম্বী কৃষক কলিঙ্গ চৌধুরী বলেন,‘প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই আমরা ব্রি-ধান ২৮ চাষ করা প্রয়োজন। ’ 
দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া এলাকার কৃষক রফিক মিয়া বলেন,‘ হাওর তলিয়ে গেলেতো সব ধানই তলিয়ে যায়। গত বছর যারা ২৮ করেছিল তাদেরও তলিয়েছে। ২৮ জাতের পাশাপাশি আমাদের ২৯ জাতের বীজ ধান লাগবে, না হলে জমি করে কোন লাভ হবে না। ’   
সুনামগঞ্জ বিএডিসির বীজ বিপণন শাখার সিনিয়র সহকারি পরিচালক আওলাদ হোসেন বলেন,‘ সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে আমরা ব্রি-ধান ২৮ ও ব্রি-ধান ২৯ দুই জাতই পাব বলে চিঠি পেয়েছিলাম। কয়েকদিন পরই আবার পৃথক চিঠিতে বলা হয়েছে এবার সুনামগঞ্জের জন্য শুধুমাত্র ব্রি-ধান ২৮ জাতের বীজ সরবরাহ করা হবে। চিঠির বিষয়টি এখনও ডিলার ও কৃষকরা ভাল করে জানেন না। শুধুমাত্র একজাতের বীজ বিক্রি করা খুবই কঠিন হবে। ’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ পরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন,‘ এবার সুনামগঞ্জের জন্য শুধুমাত্র ব্রি-ধান ২৮ এর বীজ সরবরাহ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। আমরা কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে অনুরোধ করেছিলাম ২৮ জাতের পাশাপাশি কিছু ২৯ জাতের বীজ সরবরাহ করতে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে শুধুমাত্র ২৮ ই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’
বিএডিসি সিলেটের বীজ বিপনন শাখার উপ পরিচালক সুপ্রিয় পাল বলেন,‘ সুনামগঞ্জের জন্য শুধুমাত্র ব্রি-ধান ২৮ জাতের বীজ সরবরাহের বিষয়ে আমাদের করার কিছু নেই। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা আগামী রবিবার থেকে ২৮ জাতের বীজ ধান ডিলারদের সরবরাহ করব।’
তিনি আরো বলেন,‘ ব্রি-ধান ২৮ জাতের ফলন কিছুটা কম হয় এটা সঠিক। তবে ২৮ জাতের ধান ২৯ এর অনেক ২০ দিন আগে পাকে। ২৮-এর ফলন হেক্টর প্রতি ৫ থেকে সাড়ে ৫ মে. টন, আর ব্রি-ধান ২৯ জাতের ফলন হয় প্রতি হক্টেরে সাড়ে ৬ থেকে ৭ মে. টন।’
জেলা কৃষি কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন,‘ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে ধানকে রক্ষা ও দ্রুত হাওর থেকে ধান কেটে তোলার লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি ব্রি-ধান ২৮ জাতের পাশাপাশি কিছু ব্রি-ধান ২৯ জাতের বীজ সরবরাহের। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি, কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে আগাম বন্যা ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে এবছর সুনামগঞ্জের হাওরে শুধুমাত্র ব্রি-ধান ২৮ জাত চাষাবাদ করতে যাতে বেশ আগেই ধান কেটে তোলা যায়।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: